সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ভোটের মাঠেও ‘ছক্কা’ চান গৌতম গম্ভীর ভক্তরা

তরফ আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতির জন্য আলোচিত ভারতের রাজধানীতে এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ক্রিকেট তারকা গৌতম গম্ভীর, যার বিজয়ের প্রত্যাশায় আছেন ভক্তরা।

লন্ডনে কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ, আর এখন চেন্নাইয়ে আইপিএলের ফাইনালের অপেক্ষা- ক্রিকেট নিয়ে এমন আগ্রহের সময়ে ভোটের লড়াইয়ে সাবেক ক্রিকেটারকে পেয়ে উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করলেন তারা।

ভারতের সাত দফা লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ হবে রোববার। রাত পোহালেই পূর্ব দিল্লিতে হবে গৌতম গম্ভীরের ভোটের লড়াই। সেদিকেই এখন দৃষ্টি রাখছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এল, ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে আসা গৌতম গম্ভীরের কাছে তাদের ‘অন্য রকম’ প্রত্যাশার কথা।

পূর্ব দিল্লির পাতপারগঞ্জ মার্কেটের ওষুধের দোকানি রমেশ পাট্টেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্রিকেট ভারতীয়দের মনের ভেতরেই একটা শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। সেখানকার এক নক্ষত্র গৌতম গম্ভীর ভোটের মাঠে ‘ছক্কা’ মারবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

দেশবন্ধু কলেজের ছাত্রী নিলীমা সেন বলেন, “আমার বোন নতুন ভোটার হয়েছে। এই প্রথম ভোট দেবেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে। আমার যেমন সবচেয়ে পছন্দের ক্রিকেট, আমাদের বোনেরও তাই। এবার বুঝে নিন ভোট কোন বাক্সে পড়বে।”

গৌতম গম্ভীর ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী অরবিন্দর সিং লাভলী এবং দিল্লির ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী অতীশি মারলেনা।

কথার লড়াইয়ে গৌতম ও অতীশির মধ্যে পাল্লাপাল্লি হলেও অনেকেরই আগ্রহ ক্রিকেট তারকার দিকেই।

ক্রিকেট ছেড়ে গৌতম কেন রাজনীতিতে- এ প্রশ্নের জবাবে পূর্ব দিল্লির ত্রিলোকপুরীর বিজেপি নেতা ব্রিজেন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য কোনো কারণ নেই, শুধু দেশের জন্য কাজ করতেই তার (গৌতম গম্ভীর) রাজনীতিতে আসা। রাজধানী থেকে সড়ক পথে পূর্ব দিল্লিতে আসার পথে আপনি নিশ্চয় দেখেছেন কী বড় বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে আর প্রশস্ত সড়ক?

“এগুলো মোদীজির (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) কাজ। গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রীর এই সব উন্নয়নকে গৌতম এগিয়ে নেবেন বলেই রাজনীতিতে আসা।”

২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল গৌতম গম্ভীরের। তার নেতৃত্ব আইপিএল শিরোপা জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। গৌতমের জন্ম নয়া দিল্লিতে, এখন থাকেন রাজন্দ্রনগরে।

ভারতের ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসার সংখ্যা কম হলেও গৌতম গম্ভীরই প্রথম নন। তার আগে মুহাম্মদ আজহারউদ্দিন, কীর্তি আজাদ, নভোজিৎ সিং সিধুও রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে।

বিজেপির স্থানীয় নেতারা জানান, দিল্লির তাপমাত্রা বেশি থাকায় এবার নির্বাচনে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচারণার সুযোগ তেমন পাওয়া যায়নি। শুক্রবার পূর্ব দিল্লিতে ছোট পরিসরে গৌতম গম্ভীরের রোড শো হয়েছে, সেখানে ছিল উপচেপড়া ভিড়।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ষষ্ঠ দফায় রোববার দিল্লি ছাড়াও বিহার, হরিয়ানা. ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশের ৫২টি আসনে ভোট হবে।

‘দিল্লিতে ত্রিমুখী লড়াই’

ভারতের রাজধানীতে প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার দেখা না গেলেও ফ্লাইওভার দিয়ে চলার পথে বেশ কিছু জায়গায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখা গেছে বিলবোর্ডে। শুধু তার নয়, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির কেজরিওয়ালের ছবিও শোভা পাচ্ছে বিলবোর্ডের ফ্রেমে।

দিল্লির সব আসনেই ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন স্থানীয়রা। বিজেপি, কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যেই এই লড়াই হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই তিন দল লড়লেও সব কয়টি আসনে বিজয়ী হয় বিজেপি।

গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যে জোটবদ্ধ নির্বাচনের চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। ফলে আলাদাভাবে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

লোকসভায় দিল্লির মোট আসন সাতটি। এগুলো হল- নয়া দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, পশ্চিম দিল্লি, চাঁদনি চক, উত্তর-পূর্ব দিল্লি ও উত্তর-পশ্চিম দিল্লি। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিজেপিকে নিয়ে দিল্লির নির্বাচনের লড়াইটা ত্রিমুখী।

উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারি, আম আদমি পার্টির দিলী পান্ডের সঙ্গে লড়বেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত।

চাঁদনি চক ব্যবসায়িক কেন্দ্র। এই আসনে বিজেপির হর্ষবর্ধন, আম আদমি পার্টির পঙ্কজ গুপ্ত ও কংগ্রেসের জেপি আগরওয়াল লড়ছেন। নয়া দিল্লি আসনে বিজেপির মীনাক্ষী লেখি, আম আদমি পার্টির রজেশ গয়াল ও কংগ্রেসের অজয় মাকেন; পশ্চিম দিল্লিতে কংগ্রেসের মহাবল মিশ্র, আম আদমি পার্টির বলবীপ সিংহ জাখর এবং দক্ষিণ দিল্লিতে কংগ্রেসের বিজেন্দ্র সিংহ ও আম আদমি পার্টির রাঘব চডঢা লড়ছেন-এই দুই আসনেও বিজেপির দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পূর্ব দিল্লির পাতপারগঞ্জ মার্কেটে কেনা-কাটা করতে আসা গৃহিণী পর্ণশ্রী পাড়ুই বলেন, “দিল্লির নির্বাচনটা এবার জটিল অংকের মতো। আপনি যেখানে যাবেন বলতে পারবেন না কে জিতবে?”

“ভোটাররা খুবই সচেতন। নিজের মনের কথা প্রকাশ করবে না। দিল্লির মানুষজন তাদের চিন্তাভাবনা অন্যের কাছে খুব একটা শেয়ার করে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে যাবেন সেখানে মনের কথাটা মনের মিল হওয়া মানুষের কাছে বলে ফেলেন। ফলে অংকের সমীকরণে তিন দলের লড়াই হবে।”

গাড়িচালক উজ্জ্বল দাশ বলেন, “গোটা ভারতে বিজেপির শাসন। আবার দিল্লিতে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের শাসন। কংগ্রেসও আছে ভেতরে ভেতরে তার সাথেই।

“আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিজেপি গতবার যেভাবে দিল্লির সাতটি আসনেই ছক্কা মেরেছে, এবার সেটি সম্ভব হবে না। সেজন্য ছক্কার (বিজয়ের আশায়) উদ্দেশ্যেই শেষ মুহূর্তে গৌতম গম্ভীরের মতো সেলিব্রেটি ক্রিকেটারকে এনেছে তারা।”

দিল্লিতে গত পাঁচ বছর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে ট্যাক্সিচালক মুহম্মদ জয়নাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্যার, আপনি যদি পাঁচ বছর আগে এসে থাকেন বুঝতে পারবেন, দেখবেন পরিবর্তনটা কী হয়েছে। এত ফ্লাইভার ছিল? এত সড়ক ছিল? বিশুদ্ধ জল সরবারহ আগে কি এতো বিস্তৃত ছিল? আর ডিজিটালাইজড ইন্ডিয়া কি আগে ছিল?

“এর কোনোটার জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারবেন না। আমরা যারা গাড়ি চালাই তারা বুঝতে পারি, সড়ক অবকাঠামোর কী রকম উন্নয়ন ঘটেছে। কার জন্য হয়েছে, সেটা আমার বিচার করার বিষয় নয়। কিন্তু আমি বলি, অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছে গত পাঁচ বছর।”

ভারতের শাসন ক্ষমতায় কে আসবে তা নির্ধারণে দিল্লির এই নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব রাখবে বলে মনে করছেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ভি এস লক্ষণ।

তিনি বলেন, “দিল্লির নির্বাচনের গুরত্বটাই আলাদা। কেন আলাদা প্রশ্ন করতে পারেন। দেখবেন ভারতের অন্যান্য রাজের বিভিন্ন আসনের নির্বাচন একেক পর্বে হলেও শুধু দিল্লির নির্বাচন একদিনে। কারণ কী জানেন?

“দিল্লি হচ্ছে ভারতের শাসনক্ষমতার কেন্দ্র, এখান থেকে ভারত পরিচালিত হয়, দিল্লিকে ঘিরেই ভারত। এই দিল্লির ওপর নির্ভর করে ভারত কীভাবে চলবে।”

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com